৭ই মার্চের অনুষ্ঠান ফেলে ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লেন কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর কাছ থেকে খবর পেয়ে সহপাঠীরা ওই শিক্ষককে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে আদালতপাড়ায় আইনজীবীর সামনে স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার কবিতা চত্বর সৈকতের ঝাউবাগান থেকে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী হোছাইনকে ধরে উত্তম মধ্যম দিয়ে কক্সবাজার আদালত পাড়ায় নিয়ে আসে। পরে সেখানে এক আইনজীবীর চেম্বারে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা দেন হোছাইন।
অঙ্গীকারনামায় হোছাইন নিজের অপরাধ স্বীকার করেন এবং ভবিষ্যতে কোনো ছাত্রী বা অন্য কোনো মেয়ের সাথে কোনো প্রকার অনৈতিক আচরণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন।
বৃহস্পতিবার ( ৭ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার কবিতা চত্বর সৈকতের ঝাউবাগান থেকে কয়েকজন কলেজ ছাত্র তাদের ধরে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের আইনজীবি মোহাম্মদ রেজাউল করিম কাজল এর চেম্বারে নিয়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীর মা বাবাও সেখানে আসেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এড. রেজাউল করিম বলেন, ২০-২৫ জন কলেজ শিক্ষার্থী রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. হোছাইনকে নিয়ে আমার চেম্বারে এসে তাদের অভিযোগের কথা জানান।
কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এবং ছাত্রীর বাবা মা আইনী পদক্ষেপ নিতে অনীহা প্রকাশ করায় আমি বিষয় বাইরে গিয়ে সমাধানের পরামর্শ দিই।
‘পরে অভিভাবকদের অভিপ্রায় অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প লিখিত অজ্ঞিকার নামা নিয়ে বিষয়টি আপাতত সুরাহা করা হয়।’ যোগ করেন এড কাজল।
রামু সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক হোছাইনের বিরুদ্ধে এ রকম অনৈতিক ঘটনার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ইতিপূর্বে ওই শিক্ষক তার সহকর্মীর বাসা, আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্নস্থানে ছাত্রী বা অন্যান্য নারীর সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়ে। এবং মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান।
শিক্ষকেরা আরও জানান, কলেজে আজ ৭ ই মার্চের অনুষ্ঠান ছিল। এ অনুষ্ঠান ফেলে ওই শিক্ষক অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্য কক্সবাজার চলে যান।
ছাত্রীর সহপাঠীদের ভাষ্যমতে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য কলেজ গেইট থেকে একটি সিএনজি অটো রিকসার পেছনের সিটে ওঠে। এর পরেই বাংলার শিক্ষক মোহাম্মদ হোছাইন পাশের সিটে ওঠে। এ সময় ওই শিক্ষক কৌশলে মোবাইল নম্বর নিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষক ছাত্রীটির শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে তার হাত থেকে বাঁচতে ছাত্রীটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের আগেই সিএনজি থেকে নেমে যায়।
পরে হোছাইন একাধিকবার ছাত্রীটির মোবাইলে ভিডিও কল দিয়ে উত্তক্ত করে। এক পর্যায়ে হোছাইন নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে প্রেমের প্রস্তাব দেন। এছাড়া বেড়াতে যাওয়া এবং সরাসরি শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন। অথচ এই শিক্ষক বিয়ে করেছেন প্রায় দশ বছর আগে। বর্তমানে তার স্ত্রী এবং তাদের পরিবারে চারটি সন্তান রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় হোছাইন বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকাল সোয়া ১০ টার দিকে কল করে ওই ছাত্রীকে কক্সবাজার কবিতা চত্বরে যেতে বলেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী হোছাইনের এই আচরণের কথা তার মা-বাবা এবং সহপাঠীদের জানান এবং হোইনকে হাতেনাতে ধরার জন্য কক্সবাজার কবিতা চত্বরে যান।
পরে কবিতা চত্বরে গিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হলে শিক্ষক তাকে কলেজ পোষাক পরিবর্তনের জন্য বলে। ছাত্রীটিও পোশাক পরিবর্তনের নাম করে হোছাইনকে মোটেল শৈবালের সুইমিংপুলের দিকে নিয়ে যায় এবং তাকে বাইরে রেখে ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর সে তার সহপাঠী এবং মা-বাবাকে খবর দিলে তারা এসে শিক্ষক হোছাইনকে হাতে নাতে ধরে ফেলেন।
এ সময় উত্তেজিত সহপাঠিরা তাকে মারধর এবং টানা হেঁচড়া করে। এতে ওই শিক্ষকের মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পায় । এ সময় উত্তেজিত কয়েকজন সহপাঠি তার প্যান্ট ও ছিড়ে ফেলে।
তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. হোছাইনের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এবং রাত দশটা পর্যন্ত অনেকবার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুজিবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আরো বিস্তারিত খবরা খবর নিচ্ছি। ঘটনা সত্য হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাটি সত্য হয়ে থাকলে খুবই দুঃখজনক এ কথা জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, এর আগেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগের কথা তিনি শুনেছেন।
প্রসঙ্গত রামু সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. হোছাইনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক আচরণ ছাড়াও কলেজের বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি, সিনিয়র সহকর্মীদের সঙ্গে দূর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগি ওই ছাত্রীর মা এ প্রতিবেদককে জানান, যেহেতু মেয়ে সবদিক বিবেচনা করে বিষয়টি আমরা মিমাংসা করে ফেলেছি। তবে এ ধরনের শিক্ষকের যথাযত শাস্তি হওয়া উচিত। সুত্র : দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত